অটোমান সাম্রাজ্য বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ
অটোমান সাম্রাজ্যকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই সাম্রাজ্যের আধিপত্য ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের বিশাল অংশ শাসন করেছিল। উসমানীয় সম্রাট সুলতান সুলেমান খান একজন ধর্ম বিশ্বাসী এবং শিল্প ও স্থাপত্য প্রেমী ছিলেন।
অটোমান সম্রাট সুলতান সুলেমান খান (প্রথম) যিনি ম্যাগনিফিসেন্ট নামেও পরিচিত। ইউরোপ আক্রমণ করার জন্য বিজয় পরিচালনা করেন এবং বুদাপেস্ট, বেলগ্রেড এবং রোডস দ্বীপ দখল করেন। পরবর্তীতে তিনি বাগদাদ, আলজিয়ার্স এবং এডেন দিয়েও অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হন। সুলতানের অপারাজেয় নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরে প্রভাবশালী ছিল এবং সম্রাট নিজে একজন যোদ্ধা হওয়ায় ধারাবাহিক বিজয় সম্ভব হয়েছিল।
সুলতান সুলেমানের শাসনামলকে অটোমান শাসনের স্বর্ণযুগ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সুলতানকে তার জনগনের উপর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে হয়েছিল এবং কেউ তার রায়কে বাতিল করতে পারেনি। তাঁর প্রজ্ঞা, ন্যায়পরায়ণতা, শাসক হিসাবে তাঁর উজ্জলতা এবং প্রজাদের প্রতি তাঁর করুণার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে তিনি অনেকের মন জয় করেছিলেন।
ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং অনবদ্য যুদ্ধ কৌশলের কারনে ইউরোপীয়রা তাদের শান্তির জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসাবে দেখত। অটোমান সাম্রাজ্য একদিকে যেমন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সম্প্রীতির প্রতীক, সেই সাথে বিজ্ঞান, শিল্পকলা, ধর্ম, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে।
সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের নাম থেকে উসমানীয় নামটি এসেছে। একইভাবে এই রাজবংশকে উসমানীয় রাজবংশ বলা হয়। এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল বিশাল অটোমান বা ওসমানীয় সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের সীমানা ছিল উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপের হাঙ্গেরি, রাশিয়ার ক্রিমিয়া থেকে পূর্বে জর্জিয়া এবং আরবের ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত।
অটোম্যান সাম্রাজ্যের সূচনা
তুর্কি উপজাতিদের দ্বারা সৃষ্ট অটোম্যান সাম্রাজ্যের অভ্যুদয় ১২৯৯ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ১৪৫৩ সালে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় পর্যন্ত এ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতকাল বলে ধরে নেয়া যায়। এই বিশাল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ছিল দীর্ঘ ৬০০ বছর। এ সময়েই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সুলতানের শাসনামলে বিকশিত হতে থাকে অটোমান সাম্রাজ্য।
প্রথমদিকে সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য স্থানীয় সেনাপতি ও সামন্ত রাজ্যের শাসনের ওপর নির্ভর করত। সময়ের সাথে সাথে এই সাম্রাজ্য সামরিক-অর্থনৈতিক উন্নতি তাদের রাজ্য বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে থাকে। সাম্রাজ্যের একাধিক শাসকরা এই রাজবংশকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গেছেন।
প্রতিষ্ঠাতা প্রথম ওসমান
এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম ওসমান গাজী। তিনি প্রথম ওসমান নামেই পরিচিত ছিলেন। তার নামেই অটোমান বা ওসমানীয় সাম্রাজ্যের নামকরণ হয়েছে। এই সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন উসমান গাজীর পিতা আরতুগ্রুল গাজী। ১২৯৯ সালে তুর্কি বংশদ্ভূত আরতুগ্রুল গাজী উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়ার দায়িত্ব পান সেলযুক সাম্রাজ্য কর্তৃক।
প্রথম দিকে রোমের সেলযুক সাম্রাজ্যের প্রতি অনুগত থাকলেও সেলযুক সাম্রাজ্যে ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এবং ধীরে ধীরে একটি বৃহৎ সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম মুরাদ কর্তৃক বলকান জয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্য বহুমহাদেশীয় সাম্রাজ্য হয়ে উঠে এবং খিলাফতের দাবিদার হয়। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের কনস্টান্টিনোপল জয় করার মাধ্যমে উসমানীয়রা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য উচ্ছেদ করে। ১৫২৬ সালে হাঙ্গেরি জয়ের পর ইউরোপের বলকান অঞ্চল সমূহ নিয়ে বড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৩০০ সাল থেকেই একে একে বিভিন্ন অঞ্চল জয় করতে শুরু করে ওসমানের বাহিনী। সাকায়রা নদীর পশ্চিমাঞ্চল, এস্কিসেহিরের দক্ষিণ ভাগ, অলিম্পাস পর্বত ও মারমারা সাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তার সাম্রাজ্যভূক্ত হয়। এস্কিসেহির, বিলেজিক, ইনোনু থেকে শুরু করে ইয়েনিশেহিরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দূর্গ ও নগর নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। রাজধানী হিসাবে বেছে নেয়া হয় ইয়েনিশেহিরকে।
১৩২১ থেকে ১৩২৬ সাল পর্যন্ত ওসমানের বাহিনী মুদান্যা বন্দর ও বার্সার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নেয়। বার্সার মত এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র জয় ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ জয়ের ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপে রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক মানচিত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠলো এ সাম্রাজ্য।
বাইজেন্টাইন সম্রাট তৃতীয় এন্ড্রোনিকাসের সেনাবাহিনী অগ্রসর হয়ে বর্তমান দারিজা শহরের ওরহানের বাহিনীর মুখোমুখি হয়। যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয়। নাইসিয়া শহর ১৩৩১ সালে আত্মসমর্পন করে। ১৩৩৭ সালে ইজমিত বা নিকোমেডিয়া অধিকার করা হয়। ওরহান তার জেষ্ঠ পুত্র সুলাইমান পাশাকে শহরের নিয়ন্ত্রণভার দেয়া হয়।
১৩৩৮ সালে উসকুদার জয়ের মাধ্যমে অধিকাংশ উত্তর আনাতোলিয়া উসমানীয়দের হাতে আসে। ১৩৪৫ সালে ওরহান পার্শ্ববর্তী তুর্কি রাজ্য কারেসি জয় করেন। কারেসি জয়ের ফলে প্রায় সমগ্র উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়া উসমানীয় বেয়লিকের আওতায় চলে আসে। বুরসা, ইজমিত, ইজনিক ও বেরগামা শহরগুলো উসমানীয়দের শক্তিশালী ঘাঁটি হয়ে ওঠে। এরপর ১৩৬২ সালে নিজের জয় করা বুশরায় দেহত্যাগ করেন ওরহান।
অটোমান সাম্রাজ্য বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ
১৫০০ ও ১৬০০ শতাব্দীতে উসমানীয় সাম্রাজ্য বিস্তৃতির যুগে প্রবেশ করে। ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করে। দক্ষ সুলতানদের শাসনের ধারাবাহিকতায় সাম্রাজ্য সমৃদ্ধি লাভ করে। সুলতান প্রথম সেলিম পারস্যের সাফাভি সম্রাট প্রথম ইসমাইলকে পরাজিত করে দক্ষিণ ও পূর্বদিকে সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত করেন।
তিনি মিশরে উসমানীয় শাসন প্রতিষ্ঠা ও লোহিত সাগরে নৌবাহিনী মোতায়েন করেছিলেন। উসমানীয়দের এই সম্প্রসারণের পর পর্তুগিজ সাম্রাজ্য ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রধান পক্ষ হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সুলতান প্রথম সুলাইমান ১৫২১ সালে বেলগ্রেড জয় করেন এবং উসমানীয়-হাঙ্গেরিয়ান যুদ্ধের এক পর্যায়ে হাঙ্গেরি রাজ্যের দক্ষিণ ও মধ্য অংশ জয় করে নেয়া হয়।
মোহাচের যুদ্ধে জয়ের পর তিনি বর্তমান হাঙ্গেরির পশ্চিম অংশ ও মধ্য ইউরোপীয় অঞ্চল ছাড়া বাকি অংশে তৃর্কি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৫২৯ সালে তিনি ভিয়েনা অবরোধ করেন তবে শহর জয় করতে ব্যর্থ হন। ১৫৩২ সালে তিনি পুনরায় ভিয়েনা আক্রমণ করেন তবে গুনসের অবরোধের পর তিনি আবার ব্যর্থ হন।
ট্রান্সিলভানিয়া, ওয়ালাচিয়া ও মলডোভিয়া উসমানীয়দের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। পূর্ব দিকে উসমানীয়রা পারস্যের কাছ থেকে বাগদাদ দখল করে মেসোপটেমিয়া ও পারস্য উপসাগরে নৌ চলাচলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আসে। ফরাসি ও উসমানীয়রা যৌথ প্রচেষ্টায় ১৫৪৩ সালে নাইস ও ১৫৫৩ সালে করসিকা জয় করে নেয়।
উসমানীয়রা আরও সামনে অগ্রসর হওয়ার পর হাবসবার্গ শাসক ফার্ডিনেন্ড ১৫৪৭ সালে আনষ্ঠানিকভাবে উসমানীয়দের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। ১৫৫৯ সালে প্রথম আজুরাম পর্তুগিজ যুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্য দুর্বল আদাল সালতানাতকে সাম্রাজ্যের অংশ করে নেয়। পর্তুগিজদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য ভারত মহাসাগরে প্রভাব বাড়ানো হয়।
সাম্রাজ্য একটি শক্তিশালী নৌশক্তি হয়ে ওঠে। ভূমধ্যসাগরের অধিকাংশ এলাকা উসমানীয়রা নিয়ন্ত্রণ করত। উসমানীয় সাম্রাজ্য ইউরোপের রাজনৈতিক পরিমন্ডলের বৃহৎ অংশ হয়ে ওঠে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
১৬০০ ও ১৭০০ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, উত্তরে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকাজুড়ে, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব অঞ্চলসহ বিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক ও বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল। সাম্রাজ্যে ৩৬ টি প্রদেশ ও বেশ কয়টি অনুগত রাজ্য ছিল।
সুদীর্ঘ ৬০০ বছরেরও বেশিকাল ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছে। তবে ইউরোপীয়দের তুলনায় ধীরে ধীরে তার সামরিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে থাকে। যার ধারাবাহিক অবনতির ফলে সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর আনাতোলিয়ায় নতুন প্রজাতন্ত্র হিসাবে আধুনিক তুরস্কের উদ্ভব হয়। যেটি অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার বহন করছে। বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের সাবেক অংশগুলো প্রায় ৪৯টি নতুন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
রাজবংশের শিল্প, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি
অটোমানরা শিল্প, চিকিৎসা, স্থাপত্য এবং বিজ্ঞোনে দীর্ঘদিন ধরে তাদের যোগ্যতা ধরে রেখেছে। সারিবদ্ধ মসজিদের সৌন্দর্য এবং জাঁকজমক প্রাসাদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি তুর্কি স্থাপত্যের উজ্জ্বলতার শৈল্পিকতা দেখে চোখ জুড়ে যায়। প্রচলিত কিছু শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছিল যেমন ক্যালিওগ্রাফি, কবিতা, চিত্রকলা, কার্পেট, বস্ত্র বয়ন, গান, সঙ্গীত ও সিরামিক শিল্প।
অটোমান স্থাপত্য ছিল তুর্কিদের দীপ্তির আরেকটি প্রদর্শন। মাসব্যাপী উৎসবের সময় বিভিন্ন সাম্রাজ্য থেকে গায়ক ও কবিদের ডাকা হত এবং এ অনুষ্ঠানে রাজপরিবারও অংশগ্রহণ করত। সুলতান সুলেমান খান একজন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ভাষা অনুশীলন করতেন। তার প্রাসাদে একটি বিশাল গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন।
সুলতানের পিতাও কবিতার প্রবল অনুরাগী ছিলেন। প্রিয় সন্তানের জন্য প্রেমের কবিতাও ঠিক করতেন। অটোমানরা জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং ভূগোলের উন্নত স্তরগুলি গবেষণার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করত। যুদ্ধের সময় গভীর ক্ষতগুলিকে সফল অপারেশনের জন্য অস্ত্রোপাচারের যন্ত্র আবিস্কার করেছিলেন।
সুলতানের প্রথম পুত্রের জন্মের সাথে সাথে তিনি তার ভাইদের এবং তাদের পুত্রদের মৃত্যুবরণের মত নিষ্ঠুর ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল যাতে শুধুমাত্র সিংহাসনে সঠিক উত্তরাধিকারীই সিংহাসন দাবি করতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রতিটি উত্তরসূরি রক্তপাতের এই অন্যায় আচার অনুসরণ করেনি। সাম্রাজ্যের পরবর্তী বছরগুলিতে রাজার ভাইদের কেবল কারাগারের পিছনে রাখা হবে এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না।
তোপকাপি প্রাসাদের তাৎপর্য
অটোমান সুলতানরা কয়েক শতাব্দী ধরে বিলাসবহুল তোপকাপি প্রাসাদে বাস করতেন। সেখানে পুল, উঠান, প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক ভবন এবং কেন্দ্রীয় উদ্যান ঘিরে কয়েক ডজন সুন্দর বাগান ছিল। বিশাল প্রাসাদের হেরেমে উপপত্নী, সুলতানের স্ত্রী এবং ক্রীতদাস মহিলারা একসাথে থাকতেন। এই হেরেম সুলতানের মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হত।
সুলতানের স্বার্থেই এদেরকে হেরেমে রাখা হত। হেরেমের আইনশৃঙ্খলা সর্বদা অনুসরণের জন্য প্রাসাদে নপুংসকদের নিযুক্ত করা হত। তারা দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করত। মহিলারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুলতানের জন্য নাচতেন ও গান গাইতেন। এদের মধ্যে যাকে পছন্দ হত তাকে উপপত্নী হিসাবে বেছে নিতেন। শত্রুর হাত থেকে বাচার জন্য প্রতি রাতে বাসস্থান পরিবর্তন করা হত।
অটোমান সাম্রাজ্যের পতন
অটোমান সাম্রাজ্য বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ ১৬০০ দশকের শুরুতে ইউরোপে সামরিক ও অর্থনৈতিক কমান্ডের দিক থেকে অবনতি হতে থাকে। এদিকে ইউরোপ শক্তি অর্জন করতে শুরু করে। পরপর উসমানীয় সাম্রাজ্যও ভারত ও ইউরোপের বাণিজ্য নীতির সাথে তাদের প্রতিযোগিতায় দুর্বল নেতৃত্বের কারনে এ সাম্রাজ্য পতনের দিকে নিয়ে যায়।
একের পর এক ঘটনা ঘটতে ঘটতে থাকে। ১৬৮৩ সালে সাম্রাজ্য ভিয়েনায় তার যুদ্ধে হেরে যায়। ফলে তাদের দুর্বলতা আরও বেড়ে যায়। তাদের মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে। গ্রীস লড়াই করে ১৮৩০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। পরবর্তীতে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং সার্বিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯১২ এবং ১৯১৩ সালে সংঘটিত বলকান যুদ্ধে তুর্কিরা তাদের বেশিরভাগ সাম্রাজ্য হারিয়েছিল তখন চুড়ান্ত আঘাত আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে মহান অটোমান সাম্রাজ্য ১৯২২ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র আনাতোলিয়ায় সেনা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক যুদ্ধে জয়ী হয়ে তুরস্ককে একটি প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৯২৩-৩৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি মানুষকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে এবং তুরস্কের সমগ্র সংস্কৃতিকে পাশ্চাত্য করার জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করেছিলেন। তুর্কি সাম্রাজ্যের ৬০০ বছরের দীর্ঘ সময়ে তারা তাদের বৈচিত্র, অপরাজেয় শক্তি, শৈল্পিক প্রচেষ্টা, স্থাপত্য প্রতিভা এবং তাদের ধর্মীয় উদ্যোগের জন্য আজ অবধি স্মরণীয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url