গ্রিক সভ্যতা আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতির মূলভিত্তি।
ইতিহাসে যে সকল প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে গ্রিক সভ্যতা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার ভিত্তিমূলে রয়েছে তাদের চিন্তা চেতনা। মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে গ্রিক সভ্যতার মৌলিকত্ব সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
গ্রিক সভ্যতা আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার মূলভিত্তি
প্রাচীন নগর সভ্যতাসমূহের অধিকাংশ সভ্যতাই গড়ে উঠেছিল এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে। তবে সভ্যতার শেষ ধাপে এসে দুটো প্রতিনিধিত্বশীল সভ্যতা গ্রিক ও রোম সভ্যতার বিকাশ ঘটে ইউরোপে। অন্যান্য সভ্যতাগুলির অধিকাংশই নদী কেন্দ্রীক হওয়ায় সেখানে কৃষিভিত্তিক সভ্যতা হিসাবে বিকাশ লাভ করেছিল।
কিন্তু গ্রিস ছিল সাগর কেন্দ্রীক সভ্যতা। সমগ্র ভূভাগ ধরে ছিল খাড়া খাড়া পাহাড়। মাঝখানের সমতলে গড়ে উঠেছিল এক একটি শহর। তাই প্রত্যেকটি শহরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিকাশ লাভ করে। এভাবে এক একটি নগর এক একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ভূমধ্যসাগরের তীরে ক্ষুদ্র পার্বত্য অঞ্চলে খৃস্টপূর্ব ১৬০০ নাগাদ যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসে তাই গ্রিক সভ্যতা নামে পরিচিত।গ্রিকরা আদিকাল থেকে গ্রিসে বাস করত না। তারা ১৫০০ সাল নাগাদ গ্রিসে এসে বসতি স্থাপন করে। এদের আদি পুরুষগণ অর্থাৎ একিয়ান নামে পরিচিত মানুষের দল তাদের আদি বাসভূমির গন্ডি ছেড়ে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। গ্রিকরা একটি মিশ্র জাতি।
গ্রিক সভ্যতায় দাসপ্রথা
প্রাচীন গ্রিক সমাজের বিশেষত্ব দাসপ্রথা। গ্রিকদের আগে আর কোন সমাজই দাসত্বের বুনিয়াদের ওপর গড়ে উঠেনি। গ্রিসের অভিজাত শ্রেণী দাস ও তাদের শ্রমের ওপর নির্ভর করেই টিকে ছিল। গ্রিসে যে নগর রাষ্ট্রগুলো বিকাশ লাভ করেছিল তার মূলে ছিল দাস শোষণ। নগর রাষ্ট্রের প্রায় সকল শ্রমমূলক কাজে দাসদের ব্যবহার করা হত। মূলত দাসপ্রথা ছিল গ্রিক সভ্যতার মূলভিত্তি।
গ্রিসের অর্থনৈতিক উন্নতির মূলে ছিল দাসপ্রথা। সে সময় গ্রিসে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা ছিল দাস ব্যবসা। তখন বাজারে পণ্যের মতো দাস কেনাবেচা হতো। কেউ কেউ নিজের কাজে ব্যবহারের জন্য দাস কিনত। আবার অনেকে ভাড়া খাটানোর জন্য দাসদের ব্যবহার করতো। গৃহস্থের কাজে, কলকারখানায় ও খনিতে দাস ভাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থোপার্জন করা হত।
এভাবে দাসরা গ্রিসের অর্থনীতিতে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং গ্রিক সভ্যতার প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে। কখনো কখনো যুদ্ধবন্দীদের ও দাসে পরিণত করা হত। তাদের সম্পত্তির তত্ত্বাবধান ও বিত্তবৈভব রক্ষণাবেক্ষণের সব কাজ করার জন্য দাস ব্যবস্থা অপরিহার্য ছিল। দাসের ওপর অতি নির্ভরতা প্রত্যক্ষ করে প্লেটো ও এরিস্টটল দাস প্রথাকে স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত বলে মত প্রকাশ করেন।
নগর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধ
গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিল এথেন্স ও স্পার্টা। স্পার্টা ছিল একটি সামরিক নগর রাষ্ট্র। রাষ্ট্র নেতারা ছিল সৈরাচারী। অপরদিকে এথেন্স ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র পরিচালনায় দুইটি সংসদ ছিল। একটি গোত্র প্রধানদের সংসদ এবং অপরটি সাধারণ নাগরিকদের সমিতি। এথেন্সে চূড়ান্তভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন পেরিক্লিস। তিনি এথেন্সে ক্ষমতায় আসেন ৪৬০ খৃস্টাব্দে।
এথেন্স ও স্পার্টা একে অন্যের শত্রু ছিল। এক সময় এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। ইতিহাসে এ যুদ্ধ পেলোপনেসীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত। ৪৬০ থেকে ৪০৪ খৃস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মোট তিনবার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে চূড়ান্ত পতন ঘটে এথেন্সের। এথেন্স চলে আসে স্পার্টার অধীনে। এরপর নগররাষ্ট্র থিবস দখল করে নেয় এথেন্স। ৩৩৮ খৃস্টপূর্বাব্দে ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপস থিবস অধিকার করে নেয়। তার মৃত্যু হলে আলেকজান্ডার ম্যাসিডনের সিংহাসনে আরোহণ করেন। খৃস্টপূর্বাব্দ ৩২৩ অব্দে ব্যাবিলনে তার মৃত্যু হয়।
ট্রয়ের যুদ্ধ : গ্রিক পুরানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হল ট্রয়ের যুদ্ধ। ট্রয়ের যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল দেবী এথেনা, হেরা এবং আফ্রিদিতি এই তিনজনের ঝগড়ার কারনে। ঝগড়া আর বিশৃঙ্খলার দেবী এরিস একটা সোনালী আপেল দিয়েছিলেন এই তিন দেবীকে। যার গায়ে লেখা ছিল ‘শ্রেষ্ট সুন্দরীর জন্য’। ফলে তিনজন দেবী প্রত্যেকে এই আপেলের দাবিদার বলতে লাগলেন।
সুন্দরী নির্বাচনের ভার দিলেন ট্রয় নগরীর রাজপুত্র প্যারিসকে। তিনি আফ্রিদিতিকে সবচেয়ে সুন্দরী বললেন। সে সময়ে সবচেয়ে সুন্দরী ছিলেন গ্রিসের স্পার্টার রাজা মেলেনাসের স্ত্রী হেলেন। যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল যখন প্যারিস হেলেনকে নিয়ে ট্রয়ে পালিয়ে আসেন। হেলেনকে ফিরিয়ে আনার জন্য মেলেনাস ও তার ভাইকে সাথে নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
প্রায় দশ বছর ধরে সৈন্যবাহিনী চারদিক দিয়ে ট্রয় নগরকে ঘিরে রাখলো। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে মারা গেলেন অনেকে। একসময় গ্রিক যোদ্ধারা ট্রয় নগরীতে ঢোকার জন্য ‘ট্রোজান হর্স’ নামক একটা চাতুরীর আশ্রয় নিলো। সাধারণ কাঠের ঘোড়া ভেবে ‘ট্রোজান হর্স’ কে ঢুকতে দিয়েই করে বসলো বড় ভুল।
এই রোমান্টিক ট্রাজেডি মহাকবি হোমারের মহাকাব্যে অমর হয়ে আছে। প্রাচীনকালে গ্রিসবাসীরা বিশ্বাস করতো ট্রয়ের যুদ্ধ একটা সত্য কাহিনী। ঘটনাটি খৃস্টপূর্ব ১৩০০ বা ১২০০ অব্দে ঘটেছিল। আবার অনেকে ভাবতেন এটা নিছক গল্পগাঁথা।
নতুন এক সংস্কৃতির জন্ম
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে। ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক কারণে গ্রিক সভ্যতার সাথে দুইটি সংস্কৃতির নাম জড়িয়ে আছে। একটি হেলেনিক এবং অন্যটি হেলেনিস্টিক। গ্রিসকে হেলেনীয় সভ্যতার দেশ বলা হয়। গ্রিসের প্রধান শহর এথেন্সে শুরু থেকেই যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, তাকে বলা হয় হেলেনিক সংস্কৃতি।
খৃস্টপূর্ব ৩৩৭ অব্দ পর্যন্ত হেলেনিক সভ্যতা টিকে ছিল। এ সময় মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিক সংস্কৃতি ও অগ্রিক সংস্কৃতির মিশ্রণে হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি নামে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম হয়।
ধর্ম : গ্রিকরা বিভিন্ন দেব-দেবীতে বিশ্বাসী ছিল। প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তিকে পূজার পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্য যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন সে সব বীরদেরও তারা শ্রদ্ধার সাথে পূজা করত। গ্রিকদের প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। তাদের কাছে দেবতা এপোলো ও দেবী এথেনাও ছিলেন বিশেস গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিকবাসী বিশ্বাস করত দেবতাদের বাস উত্তর গ্রিসে অলিম্পাস পর্বতের চূড়ায়। ডেলোস দ্বীপে অবস্থিত ডেলফির মন্দির ছিল গ্রিসের বিখ্যাত মন্দির।
গ্রিক সাহিত্য : প্রাচীন গ্রিস ছিল সাহিত্য ও নাট্যচর্চার লীলাক্ষেত্র। গ্রিক কবি হোমার খৃস্টপূর্ব ৯০০ অব্দে তার বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসি রচনা করেন। এর মাধ্যমে এশিয়া মাইনরের ট্রয় নগরী কিভাবে গ্রিকদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সে কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে গিয়ে পারস্পরিক দ্বন্দে লিপ্ত গ্রিকরা যে স্বজাত্যবোধের পরিচয় দিয়েছিল মহাকাব্যে তারই চিত্র ফুটে উঠে।
এ মহাকাব্যে দেব-দেবীর কাহিনী ও বর্ণনা করেন। ধর্মকে কেন্দ্র করে গ্রিসে বার্ষিক নাটক অনুষ্ঠিত হত। গ্রিকদের সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যিক কৃতিত্ব হলো বিয়োগান্তক নাটক। তৎকালীন বিখ্যাত ট্রাজিক নাট্যকার হিসাবে এস্কিলাস, সফোক্লিস ও ইউরিপাইডিসের নাম প্রণিধানযোগ্য। সফোক্লিসের কিং ইডিপাস ছিল গ্রিসের বিশ্ববিখ্যাত নাটক। তিনি শতাধিক নাটক রচনা করেন। তবে তার রচিত এন্টিগনে ও ইলেকট্রা নাটক দুটি তাকে অমরত্ব দান করেছে।
দর্শন চর্চায় গ্রিকদের অবদান
দর্শন : গ্রিকদের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল দর্শন চর্চায়। প্রথম দিকের বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন থ্যালেস। তিনি কল্পকাহিনীর বদলে প্রথম সূর্যগ্রহনের প্রাকৃতিক কারন ব্যাখ্যা করেন। ধীরে ধীরে গ্রিসে এক ধরনের যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। এদের বলা হত সফিস্ট। প্রোটাগোরাস ছিলেন সবচেয়ে প্রাচীন বিখ্যাত সফিস্ট দার্শনিক।
সৃষ্টির অজানা রহস্য নয় বরং মানুষকে মানদণ্ড বিবেচনা করে সে আলোকে দর্শনের আলোচনা ও ভাষাবিজ্ঞানে অবদানের জন্য তিনি সুবিখ্যাত হয়ে আছেন। সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটল ছিলেন এ যুগের জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক।
সক্রেটিস : সক্রেটিস ছিলেন গ্রিসের দার্শনিকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তার দার্শনিক মতবাদের প্রভাব অদ্যবধি পৃথিবীতে প্রবহমান। অন্যায় শাসনের প্রতিবাদ করায় ৩৯৯ খৃস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের শাসক হেমলক লতার বিষ খাইয়ে তাকে হত্যা করে। সক্রেটিসকে সত্যের পূজারি বলা হয়। তিনি সত্যের সন্ধানে ব্রতী হন এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে হলে জ্ঞানের প্রয়োজন বলে মনে করেন।
এ জন্য তার প্রবচন ছিল- জ্ঞানই ধর্ম এবং নিজেকে জান। তিনি মনে করেন- প্রকৃত জ্ঞানই চিরসত্য ও বিজ্ঞানসম্মত এবং একে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। এ জ্ঞানই মানুষকে ভালো ও ন্যায়পরায়ন করে তোলে। মূলত আদর্শ রাষ্ট্র ও সৎ নাগরিক গড়ে তোলাই ছিল তার দর্শনের মূল বিষয়।
প্লেটো : প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের ছাত্র। সক্রেটিসের দার্শনিক মতবাদ প্রচারে ব্রতী হন। সক্রেটিসের শিষ্যদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নামকরা ছিলেন প্লেটো। প্লেটো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য রিপাবলিক’ এর মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখেন। প্লেটো ৩৮৫ খৃস্টপূর্বাব্দে দর্শনের স্কুল ‘একাডেমিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি সক্রেটিসের শিক্ষার বক্তব্যগুলো নিয়ে ‘ডায়ালগ অব সক্রেটিস’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি দর্শন বিষয়ক মোট ৩৬ টি বই রচনা করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত রাজনৈতিক দার্শনিক। তিনি মনে করতেন রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং স্বার্থান্বেষী মানুষের প্রভাব থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত রাখতে হবে। তিনি এমন একটা রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করেন, সেখানে ন্যায় ও জ্ঞানের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
এরিস্টটল : প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটলও একজন বড় দার্শনিক ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘দ্য পলিটিক্স’। এরিস্টটলের দর্শন ছিল বাস্তবমুখী, বিশ্লেষণমূলক ও যুক্তিসম্মত। তিনি অর্থনীতি, নীতিশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, অধিবিদ্যা, সৌন্দর্য বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ের উপর দর্শন উপস্থাপন করেছেন। তিনি মনে করতেন যে, আকার ও বস্তু উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং পরস্পর নির্ভরশীল।
এ দুটির মিলনেই সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজগৎ। তার বিখ্যাত উক্তি হল, প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ রাজনৈতিক জীব। তিনি ‘লাইসিয়াম’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এখানে দেশ-বিদেশের বহু ছাত্রের সমাগম ঘটেছিল।
বিজ্ঞান ও স্থাপত্যে গ্রিকদের অবদান
বিজ্ঞান : গ্রিক বিজ্ঞানীরা প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেছিল। তারাই প্রথম প্রমাণ করেছিলেন যে পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা কক্ষপথে আবর্তিত হয়। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাস খৃস্টপূর্ব সষ্ঠ শতকে জন্ম নিয়েছিলেন।আর ৫ম শতকে জন্ম নেন বিজ্ঞানী এনাক্সাগোরাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপোক্রেটাস যথেস্ট খ্যাতি অর্জন করেন।
খেলাধুলা : খেলাধুলা ছিল গ্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। খৃস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে গ্রিসে অলিম্পিক প্রতিযোগিতার জন্ম হয়। প্রতি চার বছর অন্তর এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের খোলোয়াড়রা অংশ নিত। এ খেলার ফলে পারস্পরিক শত্রুতার বদলে গ্রিকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে উঠে।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : কল্পনা বিলাসী গ্রিকরা তাদের স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে কল্পনা আর ধর্মীয় অনুভূতির এক অপূর্ব সংমিশ্রন ঘটায়। গ্রিক স্থাপত্য শিল্প নির্মাণ কৌশলের দিক থেকে নিখুঁত। গ্রিক স্থপতিরা মনে করত যে, সারল্য ও সঠিক পরিমাপের মধ্যে দিয়েই সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। গ্রিক স্থাপত্যের উদাহরণ হিসাবে মন্দির পার্থেনন, এথেন্সের দেবী এথেনার মন্দীর উল্লেখযোগ্য।
গ্রিক সভ্যতা আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতির মূলভিত্তি। গ্রিস ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার মিলন স্থলে অবস্থিত। এই দেশ পশ্চিমা বিশ্বের জ্ঞান বিজ্ঞানের সূতিকাগার এবং গণতন্ত্রের জন্মদায়ক স্থান হিসাবে সুপরিচিত। রোমান সভ্যতার উপর গ্রিক সংস্কৃতির প্রচন্ড রকমের প্রভাব ছিল। যা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
পশ্চিমা দর্শন, অলিম্পিক গেমস, পশ্চিমা সাহিত্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক আবিস্কার এবং নাটক ইত্যাদি সকল বিষয়ে গ্রিকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এক সময়ের গ্রিক সভ্যতা সমগ্র ইউরোপে প্রভাবশালী সভ্যতা হিসাবে পরিগণিত হয়। বর্তমানে গ্রিস একটি উন্নত দেশ । ১৯৫১ সাল থেকে ন্যাটো, ১৯৬০ সাল থেকে ও ইসিডি এবং ১৯৮১ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url