ভালোবাসার অবিশ্বাস্য স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল

ভালোবাসার অবিশ্বাস্য স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল বিশ্বের অপূর্ব সুন্দর স্মৃতিসৌধ ও মনোমুগ্ধকর নিদর্শন। ইসলামিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন এবং শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল শাশ্বত প্রেমের এক অমর কীর্তি যা জনমনে আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

ভালোবাসার অবিশ্বাস্য স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল

মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মমতাজের স্মরণে ভারতের উত্তর প্রদেশে যমুনার তীরে সাদা মার্বেল দিয়ে তাজমহল তৈরী করেছিলেন। যার নির্মাণ শৈলীতে পারস্য, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গৌম্বজাকৃতি রাজকীয় সমাধিটিই বেশি সমাদৃত। সামগ্রিকভাবে তাজমহলটি একটি জটিল অখন্ড স্থাপত্য এবং শাশ্বত প্রেমের এক অমর কীর্তি ।

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য স্থাপনা

১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তাজমহলকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের তালিকাভূক্ত করে।ভালোবাসার অবিশ্বাস্য স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল ভারতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং সুন্দর স্থাপনাগুলির মধ্যে  অন্যতম যা সার্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ট শিল্পকর্ম হিসাবে বিবেচিত। সম্রাট শাহজাহানের শাশ্বত প্রেমের এক অমর  কীর্তি তাজমহল দেখতে প্রতিবছর ৪০ থেকে ৮০ লক্ষ দর্শনার্থী ভারতে আসে।

তাজমহল নির্মানের ইতিহাস

সম্রাট শাহজাহান, তাঁর মৃত স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন ১৬৩২ খৃষ্টাব্দে এবং সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খৃষ্টাব্দে। এই সৌধটির মধ্যে সম্রাট তাঁর সম্রাজ্ঞীকে সমাধিস্থ করেন। মহল তৈরী করতে প্রায় ২০ হাজার লোকের সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দী করেন।

স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার এই স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল সম্পর্কে জানা যায় এটি নির্মাণ করতে যেয়ে রাজকোষ প্রায় খালি করে দিয়েছিলেন বলে তাঁকে বন্দী হতে হয়। কথিত আছে জীবনের বাকি সময় সম্রাট আগ্রার কেল্লার জানালা দিয়ে তাজমহলের দিকে তাকিয়ে থেকে সময় পার করেছেন। শাহজাহানের মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব তাকে তাজমহলে তার স্ত্রীর পাশে সমাহিত করেন। 

ভালোবাসার অবিশ্বাস্য স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল

পূর্ণিমার রাতে তাজমহলের সৌন্দর্য যে ভাবে ফুঠে ওঠে তা ভাষায় প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। এ যেন কালের কপোল তলে একবিন্দু নয়নের জল। মনে হবে পৃথিবীর বুকে আরেক চাঁদ মানুষের সাথে মিতালি করতে নেমে এসেছে।যতই বর্ণনা শুনি নিজের চোখে না দেখলে মন ভরবেনা। দিনে হোক বা পূর্ণিমা রাতে হোক তাজমহলের সামনে গিয়ে ছবি তোলার যেন শেষ নাই।

ফরাসি প্রভাব ও রুচিময় নকশার ছোঁয়ার সঙ্গে মুঘল সাম্রাজ্য শৈলীর নকশা সমগ্র ভবনটিকে আকর্ষণীয় করে রেখেছে। শাশ্বত প্রেমের এক অমর কীর্তি তাজমহলের নির্মাণ এতটাই নিখুঁত ও সৌন্দর্যময় যা সব স্থাপত্য থেকে আলাদা করে রেখেছে শতকের পর শতক ধরে।

লুকিয়ে আছে নির্মম এক ইতিহাস

ঐতিহাসিকদের দাবি, যে সমস্ত কারিগররা তাজমহল নির্মাণ করেছিল তাদের হাত কেটে ফেলা হয়েছিল যাতে করে ভবিষ্যতে এই ধরনের নির্মান আর না তৈরী হয়। তাজমহলে প্রধান কারিগরের নাম ওস্তাদ আহমেদ লাহরি। তাজমহল তৈরী হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা মূল্যবান উপাদান সামগী দিয়ে।

তাজমহল নির্মানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এর নির্মাণ সামগ্রী বহন করে আনার কাজে ১০০০ এর ও বেশী হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রায় আঠাশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরের উপর বসানো হয়েছে।

আল্লাহর ৯৯ টি নামের ক্যালিওগ্রাফি

তাজমহলের দেয়ালে যে সব হস্তলিপি অঙ্কিত আছে তা বেশীরভাগই আল কোরআন থেকে নেয়া হয়েছে। তাজমহলের দ্বিতীয় স্থানে ক্যালিওগ্রাফি শিলালিপি হিসাবে আল্লাহর ৯৯ টি নাম খোদাই করা আছে। তাজমহলের যে চারটি মিনার দেখা যায়, সেগুলি সোজা না হয়ে বাইরের দিকে একটু হেলানো যেন ভুমিকম্পে তাজমহলের দিকে ভেঙ্গে পড়ে ভবনের কোন ক্ষতি করতে না পারে।

স্বর্গের নদীর সাথে তুলনা

তাজমহলের সামনে একটি বড় বাগান আছে এবং বাগানের মাঝখানে একটি চৌবাচ্চা আছে উত্তর-দক্ষিন বরাবর যেন তাজমহলের প্রতিচ্ছবি কেখা যায়। বাগানে অনেক ধরনের ফুল ও ঝরনা আছে। যমুনা নদীটি বাগানের নকশায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল যাতে তা স্বর্গের নদী হিসাবে এর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়।

তাজমহলে চত্বরটি দুর্গের মত তিন দিকে ঘেরা। নদীর দিকের কোন দেয়াল নেই। এই দেয়াল বেষ্ঠনির বাইরে শাহজাহানের অন্য স্ত্রীদের কবর আছে। এগুলি সাধারনত লাল বেলে পাথর দ্বারা তৈরি। তাজমহলে ঢোকার প্রধান দরজাও মার্বেল পাথরের তৈরি। তাজমহলে সব স্থাপনার মধ্যে একটা জ্যামিতিক যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়।

শাশ্বত প্রেমের এক অমর  কীর্তি তাজমহলের গম্বুজ

মনোমুগ্ধকর স্মরণীয় ভাস্কর্য তাজমহল মুলত সাদা পাথরের একটা সমাধি। সমাধিটি একটি বর্গাকার বেদির উপর দাঁড়িয়ে আছে। কাঠামোটি বিশাল এবং কয়েক কক্ষ বিশিষ্ট। প্রধান কক্ষটিতে মমতাজ ও শাহজাহানের স্মৃতি ফলক বসানো আছে। তাদের কবর আছে এক স্তর নিচে। সমাধির উপরের মার্বেল পাথরের গম্বুজ টাই সবচেয়ে আকর্ষনীয়। গম্বুজটা কখনো পেয়াজ অথবা পেয়ারা গম্বুজ নামে ডাকা হয়ে তাকে।

গম্বুজের উপরে একটি পদ্মফুলের আদলে সাজানো আছে যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বড় গম্বুজটির চার কোণায় আরও চারটি ছোট গম্বুজ থাকায় বড় গম্বুজটির গুরুত্ব আরও বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাজমহলের চারপাশে চারটি মিনার আছে য়ার প্রত্যেকটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। আর তাজমহলের উচ্চতা ১৮০ ফুট, প্রধান গম্বুজটির উচ্চতা ২১৩ ফুট এবং চওড়া ৬০ ফুট। পুরো ভবনটির আয়তন প্রায় ১৯০২ থেকে ১০০২ ফুট।

হুমকির কবলে তাজমহল

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজ সৈন্যরা তাজমহলের দেয়াল থেকে মূল্যবান ও দামী নীলকান্তমনি খুলে নেয়।১৯ শতকের শেষ দিকে লর্ড কার্জন তাজমহল পূণনির্মানের প্রকল্প হাতে নেয়। তিনি তাজমহলের ভিতরের মঞ্চে একটি বড় বাতি বসিয়েছিলেন। তখনই বাগানেরও নকশা পরিবর্তন করা হয় যা এখনও আছে। 

দ্বিতয়ি বিশ্বযুদ্ধের সময় তাজমহল রক্ষণাবেক্ষনের জন্য এর উপর একটি ভারা তৈরী করা হয়েছিল। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তাজমহলকে ভারা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে তাজমহল যে নতুন হুমকির মুখে পড়েছে সেটা হল যমুনা নদীর তীরের পরিবেশ দুষণ এবং এসিড বৃষ্টি।

পর্যটকদের জন্য আলাদা আলাদা ফি

মহল ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। ঠান্ডা মৌসুমে সবচেয়ে বেশী পর্যটক আসে। ভারতীয় পর্যটকদের জন্য মাত্র ৪০ টাকা এবং সার্কভূক্ত দেশের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫৩০ টাকা। আর অন্যান্য দেশের ১০০০ টাকা।অনলাইনেও টিকিটের ব্যবস্থা আছে।

এই বিশ্ব বিখ্যাত সপ্তম আশ্চর্য সমাধিটি এক বিরল দৃষ্টান্ত যা আজও মানুষের হৃদয়কে নাড়া দেয় এক পলক দেখার জন্য। ভালোবাসার এই অবিশ্বাস্য স্মৃতিসৌধ তাজমহলের সৌন্দর্য লিখে বা মুখে বলে বর্ণনা করা সম্ভব নয় শুধু মনের আবেগ দিয়ে বা মনের মাধুরি দিয়ে অনুভব করা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url