রহস্যে ঘেরা সপ্তম আশ্চর্যের বিষ্ময়কর স্থাপনা
রহস্যে ঘেরা ইতিহাসের সপ্তম আশ্চর্যের এক বিষ্ময়কর মনুষ্য সৃষ্ট স্থাপত্য। সকল ধরণের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও বর্তমান যুগে এত বড় নির্মাণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড সম্পর্কে চমকানো সব তথ্য জেনে নিন।
মিশরকে আমরা চিনি পিরামিডের জন্য আর এর রহস্য মানুষকে টেনে নিয়ে গেছে মিশরে। বিশাল বড় আকারের পিরামিড ও হাজার বছরের মমি এবং মৃত্যু নিয়ে মাতামাতিটা তারা একটু বেশীই করত। এ জন্যই হয়তো অমানবিক পরিশ্রম করে বড় বড় পাথর জোড়া দিয়ে খুবই নিখূঁতভাবে রহস্যে ঘেরা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক বিষ্ময়কর মনুষ্য সৃষ্ট স্থাপত্য পিরামিড তৈরি করেছিল। মৃত্যুর পরও যেন মানুষ স্বাভাবিক ভাবে থাকে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিষপত্র সমাহিত করা হত। মুলত: তারা মৃত্যুকে নয় , জীবনকে, জীবিত থাকাকে ভালোবাসত খুব বেশী।
রহস্যে ঘেরা সপ্তম আশ্চর্যের বিষ্ময়কর স্থাপনা
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড নির্মানের অনেক তথ্য পাওয়া যায়, কেউ বলেন পিরামিডের একপাশে মাটি বা পাথরের ঢাল ব্যবহার করে ভারি ভারি পাথর উপরে টেনে তোলা হয়েছে। আবার কেউ বলেন পিরামিড বানানো হয়েছে ধাপে ধাপে চার পাশদিয়ে ছোট ছোট ঢাল বানিয়ে। অপর একটি মতে, পিরামিডের চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ কাজ শেষ করে মাটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
চার হাজার বছরের পুরানো বিভিন্ন চিত্রে দেখা যায় বিশাল ওজনের পাথর গুলিকে স্লেজে রেখে অনেক মানুষ রশি দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এমন ও শোনা যায় যে, মানুষের দ্বারা পিরামিড নির্মাণ করা সম্ভব নয় এলিয়েনরা এসে বানিয়ে দিয়ে গেছে।এই সবই কল্পনা রহস্য অজানা। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড নিয়ে গবেষণা পিরামিডলজি নামে পরিচিত। পিরামিডের মধ্যে এমন শক্তি নিহিত আছে যা বিভিন্ন রকমের অপার্থিব প্রভাব সৃষ্টি করে।
পিরামিডের গঠনের মধ্যেই এর রহস্য লুকিয়ে আছে। মিশরীয় শাসকরা কিছু অপূর্ব কারুকার্য নির্মানের সাথে সাথে কিছু রহস্য রেখে গেছে, এলিয়েনের অস্তিত্ব, তারার সাথে শ্রেণীবিন্যাস, পিরামিডের মধ্যে প্রাকৃতিক তাপমাত্রা সবসময় ২০ ডিগ্রী থাকে, এ সমস্ত ঘটনা যা আজও বিজ্ঞানীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়না। পিরামিড কসমিক এনার্জি বা মহাজাগতিক রশ্মি শোষণ করার ক্ষমতা রাখে।
বাইরের পরিবেশ থেকে দুই থেকে তিন গুণ খাবার সতেজ রাখে, স্বাস্থ্য উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পিরামিডের মধ্যে ঘুমানোর পর তাদের কম ঘুমের প্রয়োজন হচ্ছে এবং তারা অনেকখানি হালকা ও শান্তি অনুভব করছে। পিরামিডের মধ্যে ধ্যান বা মেডিটেশন করলে তার ফলাফল অনেক বেশী পাওয়া যায়। অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে পিরামিড ব্যবহার করে মনস্তাত্বিক ক্ষমতাগুলোকে বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং পুরানো স্মৃতি ফিরে পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় পিরামিড ও এর সংখ্যা
প্রাচীন মিশরীয় শাসকদের বলা হতো ফিরাউন। মৃত্যুর পর তাদেরকে সমাহিত করা বা কবর দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মান করা হতো। ১৯৯০ সাল থেকে আবিস্কৃত হতে থাকা পিরামিডের কবর দেখে এ ধারনা হয় যে, প্রথমে বড় খুফুর পিরামিড এটি সমস্ত পিরামিডের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং মনুষ্য নির্মিত সবচেয়ে উচু নির্মান ছিল। এর পর খাফের পিরামিড আর শেষে মেনকাউরের পিরামিড। মিশরে ছোট বড় ৭৫ টি পিরামিড আছে।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন
পৃথিবীর এই প্রাচীন নিদর্শন পিরামিড তৈরী হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। বিশাল বিশাল পাথর খন্ডের এ্র্ই পিরামিডের উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট এবং ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এইসব পাথর খন্ডের ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, দৈর্ঘ ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। পাথরগুলি সংগ্রহ করা হত দুর দুরান্তের পাহাড় থেকে। এক একটি পিরামিড তৈরীতে প্রায় ২০ লক্ষ ব্লক তারা মরূভূমির ভিতর দিয়ে নিয়ে এসেছে।
সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিকের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১ লাখের মত। পিরামিড এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি বা ত্রিমাত্রিক গঠন যার বাইরের পৃষ্ঠগুলি ত্রিভূজাকার এবং পৃষ্ঠগুলি শীর্ষে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। প্রত্যেকটি পিরামিড বহুভূজের উপর অবস্থিত। অর্থাৎ কোনো বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষ বিন্দু থাকে এবং যার পার্শতলগুলোর প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার তাকে পিরামিড বলে।
একটি পিরামিডের যে সব উপাদান থাকে তা হল
১. একটি বহুভূজাকৃতি ভুমি, ২. কমপক্ষে তিনটি ত্রিভূজাকৃতি পার্শতল, ৩. একটি শীর্ষ বিন্দু।
বাস্তবে যে কয় ধরণের পিরামিড দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হল
- নিয়মিত পিরামিড
- অনিয়মিত পিরামিড
- খাড়া পিরামিড
- হেলানো পিরামিড
পিরামিড সম্পর্কে মিশরীয়দের বিশ্বাস
রহস্যে ঘেরা পিরামিডের বিষ্ময়কর স্থাপনা সম্পর্কে জানা যায়, মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা সর্বপ্রথম পিরামিড আকৃতির স্থাপনা তৈরী করেছিল। এদের জিগুরাত নামে ডাকা হত। এগুলি মন্দীরের অন্তর্গত ছিল যেখানে অন্যান্য স্থাপনাও থাকতো। আর সর্বশেষ জিগুরাত ৬ষ্ঠ খৃষ্টপূর্বের। এই জিগুরাতের সম্মুখভাগ ছিল আগুনে পোড়া ইট দিয়ে মোড়ানো। সম্মুখভাগ প্রায়ই বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেয়া থাকত যা জোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গুরুত্ব বহন করত।
রাজারা মাঝে মাঝে এসব রাঙানো ইটে নিজেদের নাম অঙ্কন করে রাখতেন। এই জিগুরাতগুলি সাধারন মানুষের উপাসনার জায়গা ছিলনা, ঐশ্বরিক বাসস্থান হিসাবে মানা হত। এরা খুবই প্রভাবশালী সদস্য ছিল। মিশরীয়রা দৃড়ভাবে বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে যেন কোন কষ্ঠ না হয়, জীবনটাকে যেন স্থায়ী ভাবে উপভোগ করা যায় সে চিন্তায় তারা খুব অস্থির থাকতো।
ফারাওরা প্রত্যেকে চাইতেন তার সমাধিটা বিশাল আয়তনের হোক। এরা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সমাধি তৈরীর কাজ চালিয়ে যেত। সমাধিগুলি মৃত ব্যক্তির আত্মার ঘর হিসাবে তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করত। এ জন্যই তারা মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য মমি করে রাখতো। মমি হচ্ছে মৃতদেহকে সংরক্ষণের এক বিশেষ ব্যবস্থা । আত্মার বেচে থাকার জন্য নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও খাবার মৃত দেহের সাথে দিয়ে দিত।
সমাধিত ব্যক্তিটি কত বিপুল পরিমাণ জৌলুসে ভরপুর আর ক্ষমতাবান তা জানানোর জন্যই মূলত পিরামিড তৈরী করত। এজন্য ফারাওদের মৃতদেহের সাথে বিপুল পরিমান ধন-সম্পদ দেয়া হত।সমাজের বিত্তশালী এমনকি নিম্নশ্রেণীর মানুষদের কবরেও সামান্য পরিমান খাবার দেয়া হত।
পিরামিডের সর্বত্রই সুড়ঙ্গে ভরা
বিশ্বের এই প্রাচীন নিদর্শন পিরামিডের ভিতরে মূলত ৩ টি চেম্বার আছে, তবে এই চেম্বারে আজও প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ধারনা করা হয় এর ভিতর আরো অনেক চেম্বার আছে যা আজও আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। এটাও ধারনা করা হত রাজার মৃত দেহ মমি করে ওই চেম্বারে রাখা হলে রাজার আত্মা ওই তারার সাথে সংযুক্ত থাকবে। এটাই পিরামিডের "Star Shaft Theory" বলা হয়।
বৈজ্ঞানিক কোন প্রমান না থাকায় ধারণা করা হয়, রাজাদের মৃতদেহ মমি করে রাখার জন্যই এসব বানানো হয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আজ পর্যন্ত কোনো মৃতদেহ পিরামিডের ভিতরে পাওয়া যায়নি। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা এটি ভিন গ্রহের প্রাণী এলিয়েনদের জন্যই হয়তো বানানো হয়েছিল।
রহস্যে ঘেরা বিশ্বয়কর স্থাপনা পিরামিডকে নিয়ে লিখতে গেলে শেষ হবার নয় কেননা আজও পিরামিডকে আবিস্কার করা পুরাপুরি সম্ভব হয়নি। যতই গবেষণা হচ্ছে ততই নতুন নতুন অনেক অজানা রহস্য আবিস্কৃত হচ্ছে। রহস্যে ঘেরা এই পিরামিডের মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো অজানা তথ্য। তাই পাঁচহাজার বছর পরও মানুষের কৌতুহলেরও যেন শেষ নাই।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url